রোযার গুরুত্ব ও ফযীলত
Published: 2021-04-24 03:35:00

রমযানের রোযা ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ৩ নাম্বার স্তম্ভ। ঈমান, নামাজের পর রোযার স্থান। রোযার আরবি শব্দ সওম। যার অর্থ বিরত থাকা। সওমকে বলা হয় প্রত্যেক সজ্ঞান, বালেগ মুসলমান নর-নারীর সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযার নিয়তে পানাহার, স্ত্রী সহবাস ও রোযা ভঙ্গকারী সকল কাজ থেকে বিরত থাকা। রমযান মাসের চাঁদ দেখা গেলেই প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর জন্য সিয়াম পালন করা ফরজ। এই সম্পর্কে আল্লাগ তাআলা ইরশাদ করেছেন –
”হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছৈ, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হতে পার।” – সূরা বাকারা : ১৮৩
বাকারা সূরাত অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন –
”তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোযা রাখে।” - ১৮৫ ।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (স) বলেছেন – ”যখম তোমরা রমযানের চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা রাখবে আর যখন শাওয়ালের চাঁদ দেখবে, তখন থেকে রোযা বন্ধ করেবে। আর আকাশ যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে ৩০ দিন রোযা রাখবে।” – সহীহ বুখারী : ১৯০৯, সহীহ মুসলিম : ১০১৮(১৭-১৮) উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, রমযান মাসের রোযা রাখা ফরয। ইসলামের বিধানরূপে রোযা পালন করা ও বিশ্বাস স্থাপন করাও ফরয। কোনো শরয়ী ওযর ছাড়া কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি রমযানের একটি রোযাও ইচ্ছাকৃতভাবে পরিত্যাগ করে তবে সে বড় পাপী ও জঘন্য অপরাধীরূপে গণ্য হবে। দ্বীনের মৌলিক বিধান লঙ্ঘনকারী ও ঈমান ইসলামরে ভিত্তি নষ্টকারী হিসেবে গণ্য হবে। হাদীসে ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ত্যাগকারী ও ভঙ্গকারীর জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। হযরত আবু উমামা (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (স) বলতে শুনেছি –
“আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। স্বপ্নে দেখলাম আমার নিকট দুই ব্যক্তি আগমন করল। তারা আমার বাহুদ্বয় ধরে আমাকে এক দুর্গম পাহাড়ে নিয়ে এল। তারপর আমাকে বলল, আপনি পাহাড়রেরউপর উঠুন। আমি বললাম, আমি তো উঠতে পারব না। তারা বলল, আমরা আপনাকে সহক করে দিব। আমি উপরে উঠলাম। যখণ পাহাড়ের সমতলে পৌছাঁলাম, হঠাৎ ভয়ঙ্কর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি বললাম, এ সব কিসের আওয়াজ? তারা বলল, এটা জাহান্নামীদের আর্তনাদ। তারপর তারা আমাকে নিয়ে এগিয়ে চলল। হঠাৎ কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদেরকে তাদের পায়ের মাংসপেশী দ্বারা ঝুলয়ে রাখা হয়েছে। এবং তাদের মুখের দুই প্রান্ত ছিড়ে ফেলা হয়েছে এবং তা থেকে রক্ত ঝড়ছে। আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, যারা ইফতারের সময় হওয়ার আগেই রোযা ভেঙ্গে ফেলে।” - সহীহ ইবনে খুযাইমা : ১৯৮৬, সহীহ ইবনে হিববান : ৭৪৪৮, সুনানে নাসায়ী কুবরা : ৩২৮৬, মুসতাদরাকে : ১৬০৯, তবারনী : ৭৬৬৬
রমযানের রোযা একটি সুস্থ মানুষ না রাখলে শুধু গুনাহই হয় না, ঐ রোযার পরিবর্তে আজীবন রোযা রাখলেও রমযানের এক রোযার যে মর্যাদা ও কল্যাণ, যে রহমত ও বরকত তা কখনোই লাভ করতে পারবে না এবং কোনোভাবেই এর যথার্থ ক্ষতিপূরণ আদায় হবে না।
হযরত আলী (রা) বলেন – “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের একটি রোযা ভঙ্গ করবে, সে আজীবন সেই রোযার ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে না।” – মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৯৮৭৮
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন –
”যে ব্যক্তি অসুস্থতা ও সফর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রমযানের রোযা ভঙ্গ করে, সে আজীবন রোযা রাখলেও ঐ রোযার হক আদায় হবে না। ” - সহীহ বুখারী : ৪/১৬০, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ৯৮৯৩, মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ৭৪৭৬