শিরক কি?

Published: 2021-04-24 03:45:00

শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাপ। যা আল্লাহ তাআলা কখনোই মাফ করবেন না। যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করে মারা যায় তবে তার স্থায়ি ঠিকানা হবে জাহান্নাম। শিরকের ভয়বহতা এত বেশি যে শিরক মানুষের সব নেক আমল নষ্ট করে। এবং মানুষকে চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ ইরশাদ করেন –

” নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা তার সাথে শিরকের অপরাধ ক্ষমা করবেন না। আর ইহা ব্যতীত যাকে ইচ্ছা (তার অন্যান্য অপরাধ) ক্ষমা করে দেন।” – সূরা আন-নিসা : ৪৮

হাদিসে বর্ণিত আছে, ”যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরিক না করে মারা যাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে মারা যাবে সে জাহান্নামের প্রবেশ করবে।” – সহীহ মুসলিম : ৯৩

কুরআনে আল্লাহ আরও বলেন –

”যখন লোকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিয়ে বললেন, যে বৎস! আল্লাহর সঙ্গে শিরক করনা, কেননা শিরক সবচেয়ে বড় অন্যায়।” – সূরা লোকমান : ১৩

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন –

”নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” – সূরা মায়িদাহ : ৭২

আল্লাহ তাআলা নবী কারীম (সাঃ) কে বলেন –

”আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্থদের একজন হবেন।” – সূরা যুমার : ৬৫

অতত্রব এ আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি নবী (সাঃ) যদি শিরক করতেন তাহলে তার সমস্ত আমল ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং শিরক থেকে সাবধান।

আমাদের সমাজে যেসব শিরক প্রচলিত আছে –

  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মানুষ হোক নবি, রসূল, বুজুর্গ গায়েব জানেন এমনটা বিশ্বাস করা শিরক। - সূরা নামল:৬৫, সূরা আনআম :৫০-৫৯
  • মানুষের অন্তরের কথা- আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ মানুষের মনের কথা জানেন না। এর বিপরীতে বিশ্বাস করা শিরক। - সূরা মুলক- ৬৭:১৩,১৪
  • মানুষের ক্ষমতার বাইরে এমন কোন পার্থিব লাভের আশায় অথবা কোন পার্থিব ক্ষতি হতে রক্ষা পাবার উদ্দেশে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আহবান করা বুঝায়। - সূরা জিন  : ১৮, মারিয়াম :৪৮
  • নিতান্ত অসহায় অবস্থায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাহায্যের জন্য ডাকা। রোগ নিরাময়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা।- সূরা আনফাল : , আনকাবুত : ২৯, ৬৫
  • কোন অনিষ্টকর বস্তু বা ব্যক্তি হতে বাঁচার জন্য আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো কাছে আশ্রয় নেয়া বা স্বরনাপন্ন হওয়া। - সূরা ফুসসিলাত/ হা মিম আসসাজদাহ-৪১:৩৬, সূরা মুমিনুন-২৩:৯৭-৯৮, সূরা ফালাক ১১৩:--, সূরা নাস ১১৪:-
  • রুকু, সিজদাহ, সওয়াবের আশায় কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে বিনম্রভাবে দাঁড়ানো বা নামাজের শিরক বলতে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো জন্য এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাতগুলো ব্যয় করাকে বুঝান হয়। - সূরা হাজ্জ :৭৭, আনআম : ১৬২-১৬৩
  • বিনা ভাবনায় শরিয়তের গ্রহণযোগ্য কোন প্রমান ছাড়াই হালাল হারাম জায়েজ নাজায়েজের ব্যপারে আলেম বুজুর্গ বা উপরস্থ কারো সিদ্ধান্ত অন্ধভাবে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া।- তাওবা :৩১, আনআম :১২১,আরাফ :
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে পরকালের মুক্তির জন্য সুপারিশ কামনা করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। - জুমার :৪৪, আনাআম : ৫১, বাকারাহ :২৫৫
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর জন্য মানত করা। - সূরা-হাজ্জ :২৯, বাকারাহ :২৭০, আনআম : ১৩৬
  • আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করা। চাই তা আল্লাহর নামেই করা হোক বা অন্য কারো নামে বা নবী বা জিনের নামে। - সূরা আনআম :১৬২-১৬৩
  • দুনিয়ার কাউকে এমন ভাবে ভালবাসা যাতে তাঁর আদেশ নিষেধ কে আল্লাহ তাআলার আদেশ নিষেধের উপর প্রাধান্য দেয়া অথবা সমপর্যায়ের মনে করা। - বাকারাহ : ১৬৫, তাওবা :২৪
  • কবরে শায়িত কারো জন্য ইবাদাত ব্যয় করা। অর্থাৎ সেখানে সালাত আদায় করা, সিজদাহ করা শিরক (মুসলিম-৯৮৯) তাঁর নিকট কিছু চাওয়া। তাঁর উসিলায় আল্লাহর নিকটে কিছু চাওয়া। সেখানে মসজিদ নির্মাণসহ আরও অসংখ্য শিরক বিদ্যমান। - (নুহ :২৩, ) (বুখারি- ৪২৭,২৮)
  • একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কাউকে প্রকাশ্যভাবে দুনিয়া বা আখিরাত সংক্রান্ত যে কোন ক্ষতি সংঘটন করতে পারে বলে অন্ধ বিশ্বাস করে তাকে ভয় পাওয়াকে বুঝানো হয়। মানুষ, মূর্তি, জিন ইত্যাদির অনিষ্টতা থেকে ভয় পাওয়া শিরক। প্রভাবশালি শাসকের ভয়ে ভাল কাজ বা জিহাদ হতে দূরে থাকা ছোট শিরক। তবে শত্রুর ভয়, বাঘের ভয় ইত্যাদি স্বাভাবিক ভয় শিরকের অন্তরভুক্ত নয়। - সূরা আনাআম :৮০-৮১, হুদ :৫৪-৫৫, তাওবাহ :১৩)
  • আল্লাহ ছাড়া কেউ কাউকে বাঁচাতে পারে বা মারতে পারে এমন মনে করা শিরক। - সূরা মুমিন- ৬৮


There are no comments yet.
Authentication required

You must log in to post an answer.

Log in