হজ্জ কুরবানী ও ঈদুল আযহা।
Published: 2021-07-08 12:55:00

ভ্রাতৃত্ব আর ঐক্যের সুদৃঢ় বন্ধনে বাঁধা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর এক অপূর্ব সম্মিলিত হজ একই সাথে আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত। হজের এ মাসে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর আরেকটি ইবাদতময় উৎসব ঈদুল আযহা। সে সাথে রয়েছে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম কুরবানী । এসব নিয়েই আমাদের এ আয়োজন হজ, কুরবানী ও ঈদুল আযহা।
হজ :
হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন বা স্তম্ভ। নামাজ, রোজা, যাকাত যেমন ফরজ ইবাদত, তেমনি আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমান নর-নারীর জন্য হজ অন্যতম বরকত পূর্ণ অবধারিত কর্তব্য। এর অর্থ নিয়ত করা, সংকল্প করা।
হজের গুরুত্ব : আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘মক্কা শরিফ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তির উপর আল্লাহর জন্য হজ আদায় করা ফরজ’। (সূরা আল ইমরান ,আয়াত : ৯৭)।
রাসূল (স) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ পালন করে এবং তাতে কোনো অশ্লীল কথা বলে না বা কোনো অশ্লীল কাজ করেনা, সে হজ থেকে সেদিনের মত এমন নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করে, যেদিন তার মা তাকে জন্মদান করে’। (বুখারী ও মুসলিম)
তিনি আরো বলেন, ’ফরয হজ্ব আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কি ঘটবে।’ (মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে কোবরা বায়হাকী)। এভাবে হাদীস শরীফে হজ ফরজ হওয়া মাত্র আদায় করার তাগিদ ও হুকুম দেয়া হয়েছে।
হজের আহকাম : হজের ফরজ মোট তিনটি। যথা - ইহরাম বাঁধা, আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা ও তাওয়াফে জিয়ারত সম্পন্ন করা। হজের ওয়াজিব সমূহ হল - মুজদালিফায় অবস্থান, সাতবার সাঈ করা, মিনায় জামারাসমূহে কংকর নিক্ষেপ, কুরবানী করা, মাথার চুল মুন্ডানো ও বিদায়কালীন তাওয়াফ সম্পন্ন করা।
হজের তালবিয়া : হজ ও ওমরা পালনকারীদের মিকাতে ইহরাম বাধার পর হতে তাওয়াফের স্থানে প্রবেশের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পাঠ করতে হয়। তালবিয়া হল -
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক লা শারিকালাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নে’য়মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারিকা লাকা।
কুরবানী :
কুরবানী আরবি শব্দ এর অর্থ যার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। শব্দটি আবার ত্যাগ করা, বিসর্জন দেয়া উৎসর্গ করা অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঈদুল আযহার দিনে পশু জবাই করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় বলে এ পশু জবাই করাকেই কুরবানী বলা হয়।
কুরবানীর গুরুত্ব : কুরবানী একটি আর্থিক ইবাদত। সেই মুসলমানের উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে যিনি ১০ জিলহজ সাদিকের পূর্বে মুকিম হবেন, স্বাধীন এবং নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হবেন । রাসূল (স) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’ (মুসনাদে আহমাদ, ইবন মাজাহ)। যারা কুরবানী পরিত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদীস একটি সতর্কবাণী।
কুরবানীর নিয়ম : মহিষ, উট, গরু, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া এই ৬ শ্রেণীর পশু দিয়ে কুরবানী করা যায়। কুরবানীর ক্ষেত্রে নিয়তের বিশুদ্ধতা অপরিহার্য। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ তথা ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত কুরবানী করা যায়। তবে প্রথমদিন কুরবানী করাই উত্তম।
গোশত বন্টন : পবিত্র কোরআনে (সূরা আল হাজ্জ, আয়াত : ৩৬) তিন শ্রেণী তে কুরবানীর গোশত খাওয়ানোর কথা বলা হয়েছে - কুরবানী দাতা, আত্মীয় - প্রতিবেশী এবং ফকির - মিসকিন।
তাকবিরে তাশরিক : জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত (মোট ২৩ ওয়াক্ত) সকলের উপর ফরয নামাযের পরে একবার তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চস্বরে ও স্ত্রীলোকগণ নীরবে পাঠ করবে। তাকবিরে তাশরিক হল - ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ’।
ঈদুল আযহা :
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব এর একটি হল ঈদুল আযহা। যা কুরবানীর ঈদ নামেও পরিচিত। আরবি বাক্যাংশ ঈদুল আযহার আবিধানিক অর্থ হল ত্যাগের উৎসব। হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতিবছর আরবি জিলহজ মাসের ১০ তারিখ ঈদ-উল-আযহা পালিত হয়। ঈদুল আযহার দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল আল্লাহর নামে কুরবানী করা।