ঘুম না হওয়ার কারণ ও প্রতিকার।

Published: 2021-04-01 11:30:00

 

শরীর সুস্থ রাখতে ঘুম প্রয়োজন। পরিমাণ মত ঘুম না হলে মানুষের শরীরে অনেক সমস্যা হয়। নিয়মিত ঘুম না হলে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ঘুমের অভাবে মানুষ খিটখিটে হয়ে যায়। কোন কাজে মন বসে না। সামান্য কারণে রিঅ্যাক্ট করে। তাই শরীর ও মন সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম একান্ত দরকার। বর্তমানে মানুষ কর্ম ব্যস্ত জীবন কাটাচ্ছে। এই কর্মব্যস্ত জীবনে মানুষ নিজেকে নিয়ে ভাববে বা ইক্টু সময় দিবে সেটার উপায় নেই। মানুষের নানামুখী ব্যস্ত জীবনের নানা চাপে নিদ্রাহীনতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সময়ে অনিদ্রায় ভুগছে এমন লোকের সংখ্যা অনেক। বিশেষ করে তরুন সমাজের মধ্যে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যাচ্ছে। অনিদ্রা রোগ মানুষের শারীরিক দুর্বলতা থেকে শুরু করে মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতার মতো কঠিন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই ঘুম না আসার কারণ গুলো খুঁজে বের করতে হবে এবং এই সমস্যা গুলো দূর করতে হবে। চিকিৎসকরা বলেন ঘুম না হওয়া কোন রোগ নয়, তবে ঘুম না হলে নানা রকম রোগ হতে পারে। আমরা প্রতিনিয়ত ঘুমোতে যাবার আগে কিছু না কিছু কাজ করে থাকি। তার ভেতরে কিছু কাজ আমাদের ঘুম নষ্টের কারণ হতে পারে। আসুন আজকে জেনে নেই যে কাজগুলো আমরা রাতে ঘুমানের আগে করবনা বা যে কাজগুলো ঘুম নষ্ট হওয়ার কারণ এবং এর প্রতিকার গুলো জানব-

১. ফোন ব্যবহার না করা : ঘুম না আসলে অনেকেই মোবাইলে সময় কাটায়। যেমন- Facebook, Imo, Whats app, Twitter ইত্যাদি সোসাল মিডিয়াতে সময় কাটায়। কিন্তু এতে ঘুম না আসার সমস্যাটি বেড়ে যায়। ফোনে কথা বললেও কিন্তু ঘুম হয় না। অনেকেই বলতে পারেন যে, ঘুমের সাথে ফোনে কথা বলার কি সম্পর্ক? সম্পর্ক আছে, আমরা যখন রাতে ফোনে কথা বলি তখন দেহের এনার্জির মাত্রা বাড়তে থাকে। তাছাড়া ফোনের রেডিয়েশন আমাদের মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে সাহায্য করে। তাই রাতে ফোনে কথা বলার সময় আমাদের মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে এবং কথা বলার পরও মস্তিষ্ক সজাগ থাকে বলে ঘুম আসতে চায় না।

২. ইলেকট্রনিক যন্ত্রসমূহ ব্যবহার না করা : ঘুম হওয়া বা ঘুম থেকে ওঠার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে মেলাটোনিন হরমোন। এই হরমোনটির নিঃসরণ আলোর উপস্থিতিতে বাধা প্রাপ্ত হয়। ইলেকট্রনিক স্কিন গুলো একটি নীল রশ্মি নিঃসরণ করে যা ঘুম না আসার সমস্যাটি বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে শরীর থেকে মেলাটোনিন উৎপন্ন হতে বাধা পায়। তাই ঘুমানোর ১ ঘণ্টা আগে থেকে ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। অত্যন্ত প্রয়োজন ব্যতীত এই সকল ডিভাইস ব্যবহার করবেন না।

৩. রাতে চা, কফি বা সিগারেট না খাওয়া : চা, কফি ও সিগারেট এই তিনটিরই অভ্যাস অনেকের আছে। কিছু মানুষ আছে যারা চা বা কফি ছাড়া চলতে পারে না। আবার কিছু মানুষ আছে যারা ধুমপান ছাড়া থাকতেই পারে না। বলা ভাল ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। চা, কফি, সিগারেট ঘুমানোর আগে বা রাতে খাবেন না। কারণ এগুলো ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। যদি খুব বেশি প্রয়োজন হয় তবে রাতে ঘুমানোর ৪/৫ ঘণ্টা আগে চা, কফি, সিগারেটের পূর্ব সেরে ফেলবেন। তা নাহলে রাতে ঘুমানো খুব কষ্টকর হয়ে যাবে।

৪. ঘুমের রুটিন তৈরি করা : আমরা যারা কর্মজীবী মানুষ তারা প্রতিদিন কাজের জন্য একটি রুটিন তৈরি করে থাকি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করি। ঠিক একইভাবে আমাদের ঘুমের জন্য রুটিন তৈরি করা এবং তা পালন করা দরকার। কারণ ঘুম যেকোন  প্রকার অসুস্থতা থেকে শরীরকে শতকরা ৫০ ভাগ সুস্থ করে তোলে। রাতে ভালো ঘুমের সাথে একটি মানুষের সুস্থ হয়ে থাকাটা জড়িয়ে থাকে। দেহ সুস্থ রাখতে একজন ব্যক্তির ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। তাই প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করুন। ছুটির দি হোক বা অন্য যে কোন দিন হোক না কেন প্রতিদিনই একই সময়ে ঘুমান এবং একই সময়ে উঠুন। প্রতিদিন যদি এইভাবে একই রুটিন পালন করেন তবে শরীর ধীরে ধীরৈ এই নিয়মের সাথে মানিয়ে নিবে।

৫. রাতে ব্যায়াম  না করা : কাজের চাপে সময় না পেয়ে অনেকেই দেহকে সুস্থ রাখতে রাতের বেলা ব্যায়াম করেন। কিন্তু এই কাজটি মোটেও করবেন না। এই কাজটি দেহকে সুস্থ রাখার পুরিবর্তে অসুস্থ করে তোলে। রাতে ব্যায়াম করলে ঘুম হয় না এবং ঘুম না হলে দেহের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়। তাই রাতে ঠিক মত ঘুমানোর জন্য আমাদের ব্যায়াম করা উচিত নয়। ঘুমের অন্তত ৪/৫ ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করতে পারেন।

৬. রাতে কম খাবার খাওয়া : কখনই রাতে বেশি খাবার খাবেন না। ঘুমোতে যাবার ২/৩ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নেন। হজমের পাশাপাশি ঘুমের জন্যও রাতে বেশি খাওয়া ক্ষতিকর।

৭. রাত জেগে কাজ না করা : অনেকেরই রাত জেগে কাজ করার বদ অভ্যাস আছে। রাত জেগে কাজ করার অভ্যাস থাকলে এখনই তা বর্জন করুন। রাতে ঘুম না আসার আরেকটি কারণ হল রাত জেগে কাজ করা। রাত জেগে কাজ করার ফলে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। তাই আমরা যারা রাত জেগে কাজ করি তারা এখনই এই অভ্যাসটি পরিবর্তন করব।

৮. ঘুমের জন্য পরিবেশ তৈরি : ভাল ঘুম হওয়ার জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ আবশ্যক। তাই যে ঘরে ঘুমাচ্ছেন সেটি আরামদায়ক কিনা তা দেখে নেন। যেভাবে ঘুমিয়ে সাচ্ছন্দ্য অনুভব করবেন সেই ভাবেই ঘুমাবেন। বিভিন্ন ধরনের শব্দ হলে বা ঘর বেশি গরম বা ঠান্ডা হলে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই ঘরে যেন কোন শব্দ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ঘর যদি খুব বেশি গরম হয় তবে ফ্যান ছাড়ুন এবং জানালা খুলে রাখুন। যাদের বেশি আলোতে ঘুম হয় না তারা আই মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। উপরের এই পদ্ধতিগুলো যদি অনুসরণ করেন তাহলে আপনার অনিদ্রার সমস্যা অনেকটাই কমবে। সুস্থ থাকতে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন, ঘুমের টাইম মেইনটেইন করুন, ‍নিয়মিত ব্যায়াম করুন বা মেডিটেশন করুন। তাই আজ থেকে নিজের অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করুন। সর্বপোরি, যে কথাটা না বললেই নয় ঘুমের নির্দিষ্ট সময়সূচী নির্বাচন করুন।



There are no comments yet.
Authentication required

You must log in to post an answer.

Log in