শরীরের ব্যথা আমরা কিভাবে অনুভব করি।

Published: 2021-04-20 07:30:00

আমাদের শরীরে এলার্ম এর মত কাজ করে দেহঘড়ি। যে কোন বিপদ দুর্ঘটনা ঘটার প্রাক্কালে আমাদের সতর্ক করে দেয়। ব্যথার সেন্সর বা নোসিসেপ্টরগুলো তাপমাত্রা, চাপ ও রাসায়নিক সিগন্যাল সমীকরণ নির্ণয় করতে পারে। যখনই শরীরে কোন কিছুর তারতম্য হয়, এসব সংকেত সেন্সরের মাধ্যমে শরীরে খবর পৌঁছে দেই। সতর্ক করে দেয় আমাদের। নোসিসেপ্টরের কাজ করার ধরন একটু জটিল। যদি একটি হাত আগুনের সংস্পর্শে যায় তবে এই খবর প্রথম নোসিসেপ্টরগুলো মেরুদন্ডে পাঠাই। যখন আগুন থেকে হাত সরিয়ে নেয়া হয়। তখন এই খবর সরাসরি মস্তিষ্ক চলে যায়।

বিভিন্ন ধরনের ব্যথা : ব্যথা বিভিন্ন ধরনের হয়। তবে পৃথিবীর সকল ব্যথাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। নোসিসেপটিভ ও নিউরোপ্যাসিক। নোসিসেপটিভ ব্যথা - একদম সাধারণ যে ব্যথা আমরা অনুভব করি অর্থাৎ  টিস্যু বা কলার  ক্ষয়ক্ষতির কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া কিংবা অতিরিক্ত চাপ অনুভূত হওয়া  সংক্রান্ত সংকেত মস্তিষ্কে  পৌছে যে ব্যথার অনুভূতি সৃষ্টি করে তাই।

নিউরোপ্যাথিক ব্যথা - সরাসরি স্নায়ুবিক ক্ষয়ক্ষতির ফলে এই ব্যথার উদ্ভব হয় এবং এ ধরনের সংকেত মস্তিষ্ক ঠিক সময়মতো পাই না। এই ব্যথার ফলে অসুস্থতা, বিমর্ষতা খুব ভোগায়।

ক্রোনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা কমানোর কোন কার্যকরী উপায় বিজ্ঞানীদের কাছে ছিল না। তবে অনেক গবেষণার পর একটি রাসায়নিক সমাধান পাওয়া যায় এই সমস্যার। এই রাসায়নিকটি মস্তিষ্ক থেকেই সৃষ্টি হয় যার নাম নার্ভ গ্রোথ ফ্যাক্টর। এর সবচেয়ে কার্যকরী দিক হলো ব্যথা কমানোর উদ্দেশ্যে এটি নার্ভ বা স্নায়ুর ব্যথার প্রতি সাড়া দেওয়ার মাত্রাকে সুবিধাজনক উপায় পরিবর্তন করতে সক্ষম। তবে এর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যা ভয়াবহ মাত্রাই আক্রান্ত করতে সক্ষম। তাই এটি নিয়ে এখনো বিস্তর গবেষণা চলছে।

পেইন কিলার যেভাবে কাজ করে : ব্যথানাশক ঔষধেন মূল কাজ ব্যথা যেন মস্তিষ্কে পৌঁছাতে না পারে সে ব্যবস্থা করা। নিউরন মেরুদন্ড হয়ে মস্তিষ্ক খবর পৌঁছে দেয়ার একটি পথ আছে। সেই পথেই বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের মতো দাঁড়িয়ে পথ আটকে দেয় পেইন কিলার। এই রেড সিগন্যাল কখনোই সিনে পরিণত হয় না। এ কারণে আমরা ব্যথার অনুভূতিও পাইনা। তবে এ পদ্ধতিটি শরীরের জন্য খুব সুখকর কোন বিষয় নয়। 

যারা কোনো ব্যথা অনুভব করে না : জীনগত গন্ডগোলের কারণে এমন হয়ে থাকে। এসসিএনএ (SCN9A) নামের জিনে গন্ডগোলের কারণে এমনটি হয়ে থাকে। ব্যথায় সারা দেওয়া স্নায়ুবিক কোষ মস্তিষ্কে সংকেত পাঠাতে অক্ষম হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবে। পরবর্তীতে সেই মানুষগুলোই বিভিন্ন কীর্তিকলাপ করে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে ওঠে বিখ্যাত হওয়ার নেশায়।

গেট নিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব : অনেক সময় ব্যথা পেলে সাথে সাথে ঐ জায়গায় চাপ দিয়ে বসি। দেখা যায় ব্যাথাটা এ কারণে কমেও যায় অনেকটা। আসলে এটা কেন হয় তা কিন্তু কখনো ভেবে দেখা হয়নি। ব্যথার সংকেত মূলত উৎসস্থল থেকে সরু স্নায়ুতন্ত্রের ভেতর দিয়ে যায়। তখন কিছু মোটা স্নায়ুতন্ত্রও মস্তিষ্কে খবর নিয়ে যায়। তবে তাতে ব্যথার কোন সংকেত থাকেনা। মজার ব্যাপার হলো কিছু বিশেষ প্রকৃতির নিউরন আছে যাদের বলা হয় গেটকিপার। এরা মস্তিষ্কে কোন সংকেত যাবে আর কোনটি যাবেনা সে ব্যাপারে তদারকি করে থাকে। এখন উৎসস্থলে চাপ দেয়ার ফলে যে সংকেত গেটকিপারের  কাছে চলে গেল সেটি যদি মস্তিষ্কে যাবার অনুমতি পাই তবে ব্যথার সংকেত মস্তিষ্কে যাবার অনুমতি আর পাইনা। ফলে আমরা ব্যথা অনুভবও তেমন পাইনা। যদিও প্রতিটি বিষয়ের নির্দিষ্ট নাম ও ধরন রয়েছে তবে সহজভাবে বোঝা গেল যে এখানে গেটকিপারেরই মূল দায়িত্ব। 



There are no comments yet.
Authentication required

You must log in to post an answer.

Log in