বিদ্যুৎতাড়িত হলে হার্ট বন্ধ হয় কেন?
Published: 2021-04-26 04:30:00
আমাদের হৃৎপিণ্ড গঠিহ হয় বিশেষ পেশী হৃদপশী দিয়ে। হৃৎপিণ্ড একটি নির্দিষ্ট ছন্দে সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। হৃদপেশী সংকুচিত হওয়া নির্ভর করে হৃদপেশীর কোষগুলোতে নির্দিষ্ট মাত্রায় বিভব পার্থক্য তৈরি হওয়ার উপর। স্বাভাবিক ভাপে হৃদপেশীর কোষগুলোর ঝিল্লী কোষের ভেতরের আয়নিক উপাদানকে বাইরের আয়নিকউপাদান থেকে এমন ভাবে পৃথক করে রাখে যে কোষের ভেতরের বিভব বাইরের সাপেক্ষে ঋণাত্মক হয়। কিন্তু কোন কারণে যদি এই স্থির অবস্থার বিভব পরিবর্তন হয়ে ধনাত্মক হতে শুরু করে তখন হৃদপেশীর কোষের ভেতরের কিছু পর্যায়ক্রমিক আনবিক ঘটনার সৃষ্টি হয় ফলে হৃদপেশী সংকুচিত হয়। এই ধণাত্মক হওয়ার ব্যাপার গুলো নিয়ন্ত্রিত হয় কতগুলো প্রোটিন দিয়ে নির্মিত আয়ন চ্যানেল দিয়ে । যেগুরো কোষের ঝিল্লীর নির্দিষ্ট স্থানে থাকে। প্রত্যেকটি মানুসের হৃৎপিণ্ডে ৪টি প্রকোষ্ঠ থাকে। সবগুলো প্রকোষ্ঠ একসাথে সংকুচিত হয় না। দুটি অলিন্দ আগে এবং দুটি নিলয় পরে সংকুচিত হয়। কারণ হল, অলিন্দ রক্ত সংগ্রহ করে এবং নিলয়ে প্রবেশ করায় এবং নিলয় রক্ত দেহের অন্য অংশে পৌছায়। অতত্রব দেখা যাচ্ছে হৃৎপিণ্ডে এমন একটি ব্যবস্থা থাকতে হবে যেন হৃৎপিন্ড এলোমোলোভাবে সংকুচিত না হয় । বরং এমন ব্যবস্থা থাকতে হবে যেন নির্দিষ্ট নিয়মে সংকুচিত হয়। যদি ব্রেইনের সাথে সংযুক্ত করে এই প্রক্রিয়াকে যদি আমাদের ইচ্ছে শক্তির সাথে সম্পর্কিত করে দেয়া হয় তবে তাতেও সমস্যা। এই বিষয়গুলো সামনে রেখে হৃৎপিণ্ডের মধ্যে অসাধারণ একটি ইলেকট্রিক পাথ ডিজাইন করা হয়েছে। হৃৎপিণ্ডের কিছু কোষ স্পেসালাইজড টিস্যু গঠন করে। এটি বলা হয় কনডাকটিভ সিস্টেম। এই সিস্টেমটিতে কিছু নোড থাকে। যেমন- সাইনু এট্রিয়াল নোড, এট্রিও ভেন্ট্রিকুলার নোড ও কিছু ফাইবার থাকে যেমন- বান্ডল অব হিস, পারকিনজি ফাইবার ইত্যাদি।
এস এ নোডের কোষগুলোতে প্রোটিন নির্মিত আয়ন চ্যানেলগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে যেন একা একাই একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বিভরের পরিবর্তন হয়ে কার্যকরী বিভব তৈরি করেতে পারে। ফরে এ স্থানগুলো থেকে হৃৎপিণ্ডের রিদমিক ইলেকট্রিক এক্টিভিটি তৈরী হয়। তারপর এই বিভব পার্থক্য অর্থাৎ কোষের ভেতরের ঋণাত্মক বিভব কিছু সময়ের জন্য ধনাত্মক হয়ে যাওয়ার ঘটনা এক কোষ থেকে আরেক কোষে পরিবাহিত হয় এবং এভাবে কনডাকটিভ পাথ ওয়ে বা কনডাকটিভ সিস্টেম দিয়ে পুরো হার্টে প্রবাহিত হয়।
এস এ নোড থাকে এট্রিয়াতে সুতরাং এট্রিয়ার মাংশপেশী গুলো আগে সংকুচিত হয় এবং পরে এই একশন পটেনশিয়াল ভেন্ট্রিকলে প্রবাহিত হয় ফলে ভেন্ট্রিকল পরে সংকুচিত হয়। কনডাকটিভ সিস্টেমের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এই পথের যে কোন কোষেরই নিজ থেকে একশন পটেনশিয়াল তৈরি করার ক্ষমাত থাকে। কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় যখন এস এ নোড থেকে একশন পটেনশিয়াল প্রবাহিত হয়ে আসে তখন তাদের সেই ক্ষমতা অগ্রাহ্য হয়।
হার্টের কনডাকটিভ সিস্টেম এবং হার্টের মাংশপেশী সবগুলো ইলেট্রিসিটি দিয়ে সিমুলেটেড হয়। সুতরাং বাউরে থেকে যদি হঠাৎ হাই ভোল্টেজ কারেন্ট লাগে তাহলে হার্টের সকল মাংশপেশি এবং পুরো কনডাকটিভ সিস্টেম একসাথে Active হয়ে যায়। যার ফলে হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে যায়।
তারপর হার্ট পূর্ণাঙ্গ রেস্টিং স্টেট এ ফিরে আসে মানে হল সাধারণ অবস্থায় যে বিভব পার্থক্য থাকে সে অবস্থায় ফিরে আসে। নির্দিষ্ট সময় পরে হৃৎপিণ্ডের এসএ নোড যদি অক্ষত থাকে তবে আবার একশন পটেনশিয়াল তৈরী করে হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক স্পন্দন ফিরিয়ে আনতে পারে। হার্টে যে ইলেকট্রিক শক দেয় তা এই বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করেই। কনডাকটিভ পাথওয়ের কোন কোষেরই নিজ থেকে একশন পটেনশিয়াল তৈরি করার ক্ষমতা থাকে। কোন কারণে যদি হার্টের নরমাল সার্কিটের পাশাপাশি এবনরমাল কিছু সার্কিট তৈরী হয় তাহলে হার্ট নির্দিষ্ট ভাবে স্পন্দিত হবে না। এই অবস্থাকে এরিদমিয়া বলে। এরিদমিয়ার চিকিৎসায় প্রাথমিক ভাবে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তাতে যদি ঠিক না হয় তখন ইলেকট্রিক শক দিয়ে সম্পূর্ণ হার্টকে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় হয় এই আশায় যে হার্ট স্বাভাবিক ভাবে একা একা কাজ করতে শুরু করবে।