হার্ট ভালো রাখার উপায়।

Published: 2021-04-02 11:30:00

আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল হার্ট। হৃদরোগে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই লোক মৃতুবরণ করছেন। হার্ট রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সারা শরীর জুড়ে রক্ত পাম্প করে। টিস্যুগুলোতে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য বর্জ্য অপসারণ করে। মানুষের হৃদয় একটি ব্যক্তির জীবন কাল জুড়ে কাজ করে এবং এটি মানব দেহের অন্যতম মজবুত ও কঠোর পরিশ্রমী পেশী। মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রায় বেশিরভাগ প্রাণীর হার্ট রয়েছে যা তাদের সারা শরীর কে রক্ত চাপায়। মানবদেহের হৃৎপিণ্ডটি বক্ষস্তরের গহ্বরের ফুসফুসের মাঝে অবস্থিত। স্ট্রেনাম (ব্রেস্টবোন) এর সামান্য বাম দিকে অবস্থিত। হার্টের অসুখ এমন একটি বিষয় যা বাইরে থেকে বোঝা কষ্টকর। একটি মানুষের সুস্থ থাকাটা কিন্তু এই অংশের উপর নির্ভর করে। তাই হার্ট বা হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এই অসুখ থেকে দূরে থাকতে পারি। বিশেষজ্ঞদের মতে হার্ট সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত কিছু খাবার ও ব্যায়াম করা দরকার। তাহলেই অনেকাংশে হার্ট সুস্থ থাকবে। ডায়েট হৃদরোগের স্বাস্থ্যের জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করে এবং আপনার হৃদরোগের ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু খাবার রক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মাত্রা এবং প্রদাহকে প্রভাবিত করতে পারে, এগুলি সবই হৃদরোগের প্রধান কারণ।

আসুন আজকে জেনে নেই হার্ট ভাল রাখতে কি করবেন এবং কিকি খাবার খাবেন –

 

১. সবুজ শাক-সবজী বেশি খাওয়া :

শাক সবজীতে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিজেন প্রচুর পরিমাণে থাকে। বিশেষ করে, এগুলি ভিটামিন কে এর একটি উৎস। যা আপনার ধমনীগুলি রক্ত জমাট বাড়াতে সহায়তা করে। কিছু গবেষণায়  দেখা গেছে পাতা যুক্ত সুবজ শাকসবজি গ্রহণ এবং হার্টের অসুখের ঝুঁকি হ্রাসের মধ্যে একটি সংযোগ খুঁজে পেয়েছে। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে আমাদের সুবজ শাক সবজী খাওয়া উচিত।

 

 

 

 

২. ফলমূল : ফলমূল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।    

বেরি জাতীয় ফল স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি উপকারী। যেমন- স্ট্রবেরি, রাম্পবেরি, ব্লুবেরি স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রচুর পরিমাণে বেরি খাওয়া হৃদরোগের জন্য বেশ ভাল। ব্লুবেরি প্রতিদিন খেলে রক্তনালীগুলির সাথে সীমাবদ্ধ কোষগুলির কার্যকারিতা উন্নত হয় যা রক্ত চাপ এবং রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। কমলা লেবু হার্টের জন্য বেশ উপকারী। কমলা লেবুতে ভিটামিন সি, বিটা কেরোটিন, পটাশিয়াম ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। যা হার্টকে সচল ও ‍সুস্থ রাখে। অ্যাভোকাডোস : অ্যাভোকাডোস হার্ট সুস্থ রাখার একটি দুর্দান্ত উৎস। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এটি ওজন কমাতেও সহায়তা করে। এতে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে। যা হৃদরোগের জন্য ভালো। একটি অ্যাভোকাডোতে প্রায় ৯৭৫ গ্রাম পটাশিয়াম থাকে। যা একজন ব্যক্তির দিনে প্রয়োজন পরিমাণের প্রায় ২৮% সরবরাহ করে।

 

 

৩. আখরোট : প্রতিদিন আখরোট জাতীয় ফল খেলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া কার্যকর হয়। আখরোট বাদাম হল ম্যাগনেশিয়াম তামা এবং ম্যাঙ্গানিজ এর মতো ফাইবার এর একটি দুর্দান্ত উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, আখরোট বাদাম কোলেস্টেরল এবং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

৪. শিম, মটরশুটি এবং বরবটি বেশি খাওয়া : শিম, মটরশুটি ও বরবটি কোলেস্টেরল এবং ট্রাই গ্লিসারাইড গুলির মাত্রা হ্রাস করে  এবং রক্তচাপকে কম করে। এই খাবারগুলো খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। ৫. অলিভ ওয়েল : অলিভ ওয়েল স্বাস্থ্যের জন্য ‍উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অলিভ ওয়েল নিম্ন রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকির সাথে যুক্ত হয়েছে। ৬. গ্রিন টি : গ্রিন টি বেশিরভাগ স্বাস্থ্য উপকারের সাথে জড়িত। গবেষণা থেকে জানা গেছে, তিন মাস গ্রিন টি এর গ্রহণের ফলে কোলেস্টেরল হ্রাস পেয়েছে। এটি মেদ কমাতেও সাহায্য করে। ৭. রসুন : বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য রসুন একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। রসুন এবং এর উপাদান গুলো রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল হ্রাস করতে সাহায্য করে। রসুন কাঁচা খেলে হার্টের জন্য খুবই উপকারি। ৮. বাদাম : বাদাম রক্তের কোলেস্টেরল হ্রাস করে। হার্টের জন্য বাদাম স্বাস্থ্যকর খাবার। এতে ভিটামিন ই, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফাইবার রয়েছে। ৯. খাবারে লবণের পরিমান সীমিত : খাদ্যে লবণের পরিমান কমিয়ে দিন। খাবারে বেশি লবণ থাকলে হাইপারটেনশন এবং হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। ১০. নিয়মিত ব্যায়াম করা : শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন। ব্যায়াম শুধু শরীর বা হার্ট সুস্থ রাখে সেটা নয় বরং এটি মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে। ১১. হলুদ : হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা অনেকেই অবগত। কাঁচা হলুদ হার্টের জন্য বেশ কার্যকর। তাই হার্ট সুস্থ রাখতে কাঁচা হলুদ খেতে পারেন। ১২. স্ট্রেস থেকে দূরে থাকা : সবসময় পজিটিভ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করুন। ভাল ভাল বিষয় ভাবুন। মেডিটেশন করুন। প্রাণ খুলে হাসুন। মন ভালো রাখতে বই পড়ুন।

 

 

উপরের খাবার ও নিয়ম গুলো নিয়মিত পালন করার চেষ্টা করুন। শুধু খাবারে পরিবর্তন নয় বরং নিজের অভ্যাস গুলো পরিবর্তন করুন। নিয়মিত ঘুমান, সময়মত খাবার খান তাহলেই সুস্থ থাকবেন।

There are no comments yet.
Authentication required

You must log in to post an answer.

Log in