ডিজিটাল যুগে চোখের সমস্যা ও তার প্রতিকার।

Published: 2021-04-23 07:30:00

মানুষ সাধারণভাবে চোখ দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পায়। তবে স্পষ্ট দর্শনের মাত্র ২৫ সেন্টিমিটার। চোখ হতে ২৫ সে.মি.দূরের জিনিসকেই আমরা সবচেয়ে ভালোভাবে দেখতে পারি। এর চেয়ে বেশি অথবা কম দূরত্বের বস্তুকেও আমরা দেখতে পারি তবে তা ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে অবস্থিত বস্তুর তুলনায় অস্পষ্ট।

চোখের গঠন :  মানুষের চোখ দুটি মাথার দুপাশে বহিঃকর্ণ ও নাসারন্দ্রের প্রায় মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত। চোখের ১৬ অংশ বাইরে উন্মোচিত এবং বাকি ৫৬ অংশ কোটরের ভেতর অবস্থান করে। চোখের বিভিন্ন অংশের দুটি প্রধান ভাগ। অক্ষিগোলক ও আনুষঙ্গিক অঙ্গ। অক্ষিগোলক ৩টি স্তর নিয়ে গঠিত। স্ক্লেরা, কোরয়েড এবং রেটিনা।

দর্শনের পদ্ধতি :

রেটিনা :  অক্ষিগোলকের ভেতরের স্তরকে রেটিনা বলে। রেটিনায় দুই ধরনের আলোক সংবেদনশীল কোষ থাকে। রড কোষ ও কোণ কোষ। রড কোষ অন্ধকারে দেখতে সাহায্য করে আর কোণ  কোষ গুলো রঙিন আলো বা রং বুঝতে সাহায্য করে।দর্শন প্রক্রিয়া পাঁচটি ধাপে সম্পন্ন হয় -

১. চোখের আলো প্রবেশ।

২. রেটিনায় প্রতিবিম্ব গঠন। 

৩. প্রতিবিম্বের বৈদ্যুতিক সিগনালে রূপান্তর। 

৪. প্রতিবিম্ব সম্পর্কে স্নায়ু অনুভূতির বিশ্লেষণ ও দর্শন।

৫. স্নায়ু অনুভূতির বিশ্লেষণ ও দর্শন।

এছাড়া সঠিক দর্শনের জন্য যে ব্যাপারটি অধিক জরুরি তা হলো উপযোজন। লেন্স ও দর্শনীয় বস্তুর মধ্যে দূরত্ব না কমিয়ে  লেন্সের ফোকাস পয়েন্ট সঠিক করার জন্য  সাসপেন্সরি লিগামেন্ট ও সিলিয়ারি পেশীর সংকোচন- প্রসারণের প্রক্রিয়াকেই বলা হয় উপযোজন। উপযোজন প্রয়োজন একারণে যে আমাদের চোখ স্বাভাবিক অবস্থায় 6 মিটার দূরত্বের বস্তুর প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারে সঠিকভাবে। এর চেয়ে বেশি দূরত্ব গেলে ফোকাস পয়েন্ট পরিবর্তন প্রয়োজন হয়। 

স্বল্পদৃষ্টি ও  দূরদৃষ্টি সমস্যা :  অনেকে কাছের জিনিস দেখতে পান না। তবে তুলনামূলক দূরের জিনিস স্পষ্ট দেখতে পান। এই সমস্যাকে দূরদৃষ্টি সমস্যা বলা হয়। ঠিক এর বিপরীত সমস্যাকে বলা হয় স্বল্পদৃষ্টি সমস্যা। মূলত এই সমস্যা দুটি হয় যখন চোখের লেন্সের ক্ষমতা বাড়ে ও কমে। যদি অক্ষিগোলক বড় হয়ে যায় তবে লেন্সের ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বস্তুর প্রতিবিম্ব রেটিনায় না হয়ে তার পেছনে সৃষ্টি হয়। তখন উত্তল লেন্সের চশমার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়। আবার যদি অক্ষিগোলক ছোট হয়ে যায় তবে লেন্সের ক্ষমতা বেড়ে যায়। তখন বস্তু হতে আগত আলোকরশ্মি রেটিনার পূর্বেই মিলিত হয়। ফলে স্পষ্ট প্রতিবিম্ব সৃষ্টি হয় না। অবতল লেন্সের চশমা দিয়ে স্বল্পদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টির সমস্যা দূর করা যায়।

 চোখের সমস্যা ও প্রতিকার :  বর্তমানে মোবাইল ও কম্পিউটার আমাদের প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। এ সকল ডিভাইস হতে নীল আলো বের হয়। এই নীল আলো আমাদের চোখ এবং সম্পূর্ণ শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কারণ নীল আলো চোখের ’কোণ’ কোষগুলোর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ‘কোণ’ কোষের কার্যকারিতা কমিয়ে নষ্ট করে দেয় নীল আলো। এ কারণে অন্ধত্বের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়া দীর্ঘ  সময় উজ্জ্বল আলোতে থাকলে চোখের পানিও শুকিয়ে যায়। এ কারণে চোখে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা সৃষ্টি হয়। রাতে ঘুমনোর আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে তার শরীরের মেলানিন উৎপাদন করতে বাধা দেয়। মেলানিন উৎপাদনের হার এর সাথে ঘুমের সমানুপাতিক সম্পর্ক রয়েছে। শুধু মেলানিন নয় শরীরের অন্যান্য হরমোন উৎপাদন কমে যায়। ফলে সার্বিকভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে এবং এভাবে চলতে থাকলে শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে। যার ফলাফল দাঁড়ায় ক্যান্সারসহ  অন্ধত্ব ও নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। 

এজন্য চোখের সাথে সাথে শরীরকে সুস্থ রাখতে চাইলে সন্ধ্যার পর থেকে মোবাইল ব্যবহার কমিয়ে ঘুমানোর এক ঘণ্টা আগ পর্যন্ত চালাতে হবে। এবার ঘুমাতে যেতে হবে। প্রতিদিনের মোবাইল ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে । এছাড়া পর্যাপ্ত আলোতে কাজ করতে হবে। কম আলোতে চোখে চাপ পড়ে। ফলে চোখ ও মাথা ব্যথা হয়।  যারা কম্পিউটারে কাজ করে তারা অবশ্যই কাজ করার সময় চশমা ব্যবহার করবে। কাজের মাঝে একটু ঘুমিয়ে নেওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করা , চোখ পানি দ্বারা পরিষ্কার করা ও মাঝে মাঝে চক্ষুবিশেষজ্ঞের মাধ্যমে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত । আমাদের মনে রাখতে হবে আনন্দ উপভোগের জন্য সুস্থতা সবচেয়ে বড় শর্ত। পৃথিবীতে ডিজিটাল আনন্দ উপভোগের জন্য নিজেকে সুস্থ রাখা অত্যান্ত জরুরী।



There are no comments yet.
Authentication required

You must log in to post an answer.

Log in